ঢাকা , রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫ , ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ক্যালিফোর্নিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬১৩: জাতিসংঘ প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেল গাড়ি, বরসহ নিহত ৮ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পৌঁছেছে ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারে টেক্সাসে হঠাৎ বন্যায় ২৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২৫ শিশু পাকিস্তানে অফিস বন্ধ করল মাইক্রোসফট, কর্মী ছাঁটাই ভুলবশত নিজেদের ছোড়া গুলিতে ৩১ ইসরায়েলি সেনা নিহত: রিপোর্ট চুক্তি নবায়ন করতে আলোচনার টেবিলে মেসি ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেলো চেলসি ক্লাব বিশ্বকাপের সেমির টিকেট পেলো ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স ধ্বংসস্তূপ থেকে ইংল্যান্ডকে টেনে তুললেন ব্রুক-স্মিথ লিড পেয়েও অস্বস্তিতে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে গেলো ভারত সিরিজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা দারিদ্র্য, প্রতারণা আর দালাল চক্রের ভয়াবহ বাস্তবতা বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ হাসপাতালে ভর্তি ৮৬ প্রতিদিন সড়কে ঝরছে ১৫ প্রাণ গোলাম মাওলা রনি টেলিভিশন টকশোতে অসত্য তথ্য ছড়াচ্ছেন-প্রেসসচিব আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন-জামায়াত আমির
* নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে যারা এগোবে, তাদের সঙ্গে আমরা আছি : গাজী আতাউর * সমঝোতার চেষ্টা চলছে, এখনো নির্বাচনী জোট নয় : মিয়া গোলাম পরওয়ার

শক্তিশালী হতে তৎপর ইসলামি দলগুলো

  • আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৭:০১:২২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৭:০১:২২ অপরাহ্ন
শক্তিশালী হতে তৎপর ইসলামি দলগুলো
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে নিজেদের দলের পাল্লাভারি করতে তৎপর হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রাজনীতিক দল। এরইমধ্যে নিজেদের দলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে আগামীতে বাংলাদেশের মসনদে বসতে তৎপরতা চালাচ্ছে ইসলামপন্থী রাজনীতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একটা ‘সমঝোতায়’ তৎপরতা চলছে। তারা দেশে সবকটি সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী দেয়া এবং ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে চায়। তবে এই ‘সমঝোতা’ উদ্যোগকে এখনই জোট বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট দলগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোরমতে, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যূত্থানের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থেকেও কৌশলে নিজেদের ক্ষমতার ঘরে রেখেছে ইসলামপন্থী দলগুলো। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যখন যে দাবি করছে, সেটাই সফলতা পাচ্ছে। ফলে এখনই জোট গঠনের কোনো ঘোষণা দেয়া হবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে এটা একটা রূপ পেতে পারে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কতটা যুক্ত হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, এনসিপিও নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে। নতুন করে ফ্যাসিস্ট না আসুক, সেটি তারাও চায়। তাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে। হয়তো সামনেও যোগাযোগ হতে পারে। তবে এই ‘সমঝোতা’ উদ্যোগকে এখনই জোট বলতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট দলগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখনই জোট গঠনের কোনো ঘোষণা দেয়া হবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে এটা একটা রূপ পেতে পারে।
রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না, এটা ধরে নিয়েই ইসলামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চাচ্ছে। সংবিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার প্রশ্নেও এসব দলের অধিকাংশের অবস্থান কাছাকাছি। জামায়াত-এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশসহ অনেকগুলো দল সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। এর মধ্যে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু কিছু দল উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমাতে প্রস্তাবিত সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি বদলাতেও তারা একমত। জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কতটা যুক্ত হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। দলটির সঙ্গে সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে একধরনের মতৈক্য আছে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের সঙ্গে। তবে বিএনপি এ প্রস্তাবগুলোর অনেকটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএনপি মনে করে, নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনই উপযুক্ত। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি জটিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখন সম্ভব নয়। পাশাপাশি সরকারপ্রধানের ক্ষমতা কমানো ও মেয়াদের বিষয়ে দলটি শর্ত দিয়েছে। তারা মনে করে সরকারপ্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমস্যা হবে। সংস্কার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে এই অবস্থানগত ব্যবধানও ইসলামপন্থী, এনসিপিসহ কিছু দলের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে গত শনিবার ঢাকায় যে মহাসমাবেশ করেছে তাতে জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন। তবে বিএনপির কেউ ছিলেন না। তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া দলগুলোর নির্বাচন ও সংস্কার দুই বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে। সমাবেশে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার কথা প্রকাশ পায়। এটাকে নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থী দলগুলোর একমঞ্চে আসার প্রাক্?-প্রস্তুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, এসব দলের মধ্যে কওমি ঘরানার পাঁচটি দল সমঝোতা জোটের আলোচনার জন্য সম্প্রতি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে। ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার লক্ষ্যে প্রথম প্রচেষ্টা শুরু করেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। গত এপ্রিলে তার এই উদ্যোগে যুক্ত হয় আরও চারটি নিবন্ধিত ইসলামি দল। সে দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস। এই পাঁচটি দল ২৩ এপ্রিল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানায়। এর আগে বরিশালে চরমোনাই পীরের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমিরও ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনার উদ্যোগে একমত হয়েছিলেন। এরপর জামায়াতের সঙ্গেও ইসলামী আন্দোলনের একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক বা আলোচনা হয়েছে। এটি চলমান রয়েছে। আমরা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। নির্বাচনে ভালো ফলের জন্য সবাই চেষ্টা করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সে জন্য সর্বোচ্চ কৌশল আমাদের নিতে হবে। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন ও সংস্কার ঘিরে বিএনপির বিপরীতে যেসব বক্তব্য বা তৎপরতা, তার কেন্দ্রে রয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতিতে ১ জুলাই বিএনপির অনুষ্ঠানে জামায়াত অংশ নিলেও ইসলামী আন্দোলন যায়নি। দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হলেও ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তারা বিএনপির আমন্ত্রণ পাননি। বিএনপির ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বক্তব্য দেন। খুব সংক্ষেপ ও নিরুত্তাপ বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এর আগে গত ২০ জুন খুলনায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একধরনের সমঝোতা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর একটি ভোটবাক্স থাকবে। তিনি বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। নীতিগতভাবে সবার মধ্যে একটা থিংকিং (চিন্তা) আছে। তবে এখনো নির্বাচনী জোট নয়, পারস্পরিক আলোচনা চলছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, প্রার্থী বাছাই, প্রার্থীদের কার মাঠে কী অবস্থান, সেটি যাচাই করে জোটের ঘোষণা হতে পারে। বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত থাকায় বিএনপিকে এখন সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ছোট দলগুলোর গুরুত্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কাও আছে ছোট দলগুলোর মধ্যে। তিনি বলেন, এটা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। ইসলামী ও দেশপ্রমিক দলগুলো, যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ধারণ করে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং ফ্যাসিবাদ যাতে ফিরে না আসতে পারে তার পক্ষে, যারা সমঝোতার চিন্তার পক্ষে একমত, তাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের চিন্তা চলছে। যারা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে, কালো যুগ ফিরে আসুক, এমনটি চায় না, তারা এই জোট গঠনের চিন্তা করছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স